বর্তমান বাজেট ও সরলী চিন্তা ভাবনা
- by
- June 24, 2020
- 380 views

বাংলাদেশের ২০২০-২১ অর্থ বছরের খসড়া বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।বাজেট একটি দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন কী পর্যায়ে হবে তা বলে দেয়। ব্যাবসা, বাণিজ্য, চকুরি, কৃষি, গার্মেন্টস, যাতায়াত, আমদানি – রফতানির একটা চিত্র ফুটে ওঠে। কিন্তু সাধারণ মানুষ বাজেট বোঝে না, তারা বোঝে তাদের আয় উপার্জনের মধ্যে থেকে জীবন জীবিকা চালাতে পারছে কি না, যারা দিন মজুর তাদের ভাবনা তাদের শ্রমের বিনিময়ে পরিবার পরিজন সহকারে মোটা ভাত, মোটা কাপড় পাচ্ছে কি না, এই সমস্ত নিম্ন আয়ের মানুষের এর থেকে কোন উচ্চাকাঙ্খা নেই, বিলাসিতা নেই।
বর্তমান বাজেট হবে করোনাবান্ধব। করোনায় যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা সামলানোই এর প্রধান কাজ। তাই এদিকে দৃষ্টি দিতে না পারলে জনগণকে চরম খেসারত দিতে হতে পারে। এতে ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন সেক্টরে যা রীতিমতো ভয়ংকর এক দানবের মতো চেপে বসেছে আমাদের উন্নয়নের চাকা।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে বাজেট ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। এখনকার সময়ে এটা হাস্যকর মনে হবে। কিন্তু সেই সময় পোড়ামাটির গন্ধ চারিদিকে। সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু সরকারের ১৯৭২ -৭৫ পর্যন্ত কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে টের পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধু কিভাবে দেশ পরিচালনা করেছেন। এখন ২০১৯-২০ সালে বাজেট ছিল ৫ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা। আর বর্তমানে খসড়া বাজেটে তা ধরা হয়েছে ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। বিশাল বাজেট যা ১৯৭২ সালে কল্পনাও করা যায় নাই। কৃষি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষি বান্ধব সমাজ গড়ে তুলতে হবে, কৃষি ও কৃষকের সুবিধা বাড়াতে হবে।
কৃষির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত গতিতে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। প্রয়োজনে বিনামূল্যে সার বিতরণ করতে পারলে কৃষিক্ষেত্রে মহাবিপ্লব শুরু হবে। এ ছাড়াও বালাই নাশক, কীটনাশক ঔষধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেচযন্ত্র, শ্যালো মেশিন দেওয়া এবং কৃষি বিপ্লবের কথা মনে আছে কি? সেই বিপ্লবের ফলে আজ বিশাল হাওর বাওর ও বিল অঞ্চলে হাজার হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হচ্ছে – যা এক সময় পতিত জমি হিসেবে ব্যবহার হতো।
বৈশ্বিক অবস্থার ফলে দেশে হাহাকার শুরু হয়েছে তাকে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মেকাবিলা করতে হবে। বিভিন্ন সেক্টরে যে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে তা বিবেচনায় নিতে হবে। এবং বিদেশ ফেরতদেরকে সহায়তা দান করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা মোটেই ভালো নয় বলে সকলের ধারণা জন্মেছে। তাই ডাক্তারসহ লোকবল বৃদ্ধি, আধুনিক যন্ত্রপাতি আনয়ন এবং ভৌতকাঠামো বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে বাজেটে ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়াও শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দিত হবে, অবকাঠামো, অনলাইন ক্লাসের নিশ্চয়তা এবং শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে রাম রাজত্ব চলছে। করোনাকালে সরকার তিন মাসের শ্রমিকদের বেতন দিলেও সুফল শ্রমিকেরা পায়নি বলে মনে হয়। এ গার্মেন্টসের উপর অর্থনীতি অনেকটা নির্ভরশীল, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় পথ। যা হেলা করলে হবে না, কারখানাগুলো যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে, এ ব্যাপারে বাজেটে সুরক্ষা দেওয়া দরকার। ওয়াসা পানির দাম বৃদ্ধি করেছে- এটা করোনাকালীন সময়ে কতটা যৌক্তিক? বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
শুধু ব্যবসায়ীক মহল ছাড়া কেউও কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না। বরং অনেকের মত রয়েছে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রী এমপিদের কোন হিসাবের বা জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই বলে মনে হচ্ছে। ক্যাসিনিও কেলেংকারীর সুরাহা চায়। একই ব্যক্তি বা কোম্পানি হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ পায় কি করে? এ সমস্ত কাজে সুশাসন না থাকলে জনবান্ধব সরকার হবে কি? তাই জনগণ এ ব্যাপারে নিশ্চিয়তা চায়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাস ট্রাকের চাঁদাবাজি চলছে বলে খবরে প্রকাশ। এই থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় খুঁজতে হবে। মানুষ এই গুলো পছন্দ করে না। ইন্টারনেট সার্ভিস ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। তাতেই কলরেটসহ বিভিন্ন ফোন কোম্পানিগুলো কলরেট বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা মোটেই কাম্য নয়, এ ব্যাপারে বাজেটে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চায় জনগণ।
আশার বাণী যে, পদ্মা ব্রিজের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এ ব্রিজ শেষ হলেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে জেলাগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটবে কেউ রোধ করতে পারবে না। এই সরকারের মাননীয় প্রধানমন্রীর সাহসী পদক্ষেপের ফসল। তাই বাংলাদেশের হারানোর যত সম্ভাবনা, তার থেকে অর্জনের পথও খোলা আছে বহুগুণে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনগণের কথা শুনতে পাচ্ছেন? আপনিই দেশটাকে ভালো করতে পারেন। আপনার প্রতি হাজার হাজার মানুষ তাকিয়ে রয়েছে। বল এখন আপনার কোর্টে, আপনি যেভাবে খেলবেন, সেভাবেই হবে। তাই সরকারের কাছে সবিনয় অনুরোধ, বাজেটের অসঙ্গতিগুলো দুর করুন, জনগণের প্রতি আস্থা রাখুন, তাহলেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। বাজেটকে জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করুন। সরকারের সমালোচনা করাই শুধু কাজ নয়, সরকারকে পথ দেখানোটা বড় কাজ। নির্বাচন আসলে আপনার ভোটটা কোথায় কিভাবে দিবেন, সেটা নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করাই উত্তম। বাজেট গণবান্ধব হোক এটাই সকলের প্রত্যাশা।
মীর আবদুর রাজজাক। লেখকঃ কবি ও প্রাবন্ধিক ( প্রফেসর ও সাবেক বিভাগীয়প্রধান, ইংরেজি বিভাগ, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া)। সম্পাদনা র/ভূঁ। ম ২৪০৬/০৪